ফিল সফিক্যাল ইনভেস্টিগেশনস এ ভিটগেনস্টাইন কীভাবে দেখান যে শব্দের অর্থ উহার ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল

0
1888
Assignment

ফিল সফিক্যাল ইনভেস্টিগেশনস এ ভিটগেনস্টাইন কীভাবে দেখান যে শব্দের অর্থ উহার ব্যবহারের উপর নির্ভরশীল

Contemporary Western Philosophy Honours2020

অর্থ
তত্ত্ব ( Theory of Meaning ):ভিটগেনস্টাইনের অর্থবিষয়ক মতবাদ ( Theory of Meaning) অনুসারে , কোন শব্দ যে বস্তুর জন্য ব্যবহৃত হয় তার অর্থ সেই বস্তুর নির্দেশক নয় | একথা ঠিক যে, বস্তুকে নির্দেশ করা কোনো কোনো শব্দের অর্থের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য । কিন্তু এরা (নামবাচক পদসমূহ ) সামগ্রিক ভাষার মাত্র একটি ক্ষুদ্র ও অপ্রতিনিধিতমূলক অংশের বেলায় প্রযোজ্য । আর এসব ক্ষেত্রেও এরা যে – বস্তুর নির্দেশ করে তাকে তাদের অর্থ বলা যায় না। অর্থ বলতে বরং বোঝায় গতানুগতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত শব্দের সেই ক্ষমতাকে যার ফলে তারা বস্তুর জন্য বা বস্তুর স্থলে ব্যবহৃত হতে পারে ।

শব্দের অর্থ কাকে বলে? এটি একটি দার্শনিক প্রশ্ন। এ- প্রশ্ন এমন এক অনুসন্ধানক্রিয়ার অপেক্ষা রাখে, যাকে কীভাবে পরিচালনা করতে হবে, তা আমরা জানি না । অর্থ বলতে কী বোঝায় , তা জানতে হলে একটি শব্দের অর্থ কীভাবে শেখা ও ব্যাখ্যা করা হয়? একটি বিশেষ শব্দের অর্থ কেউ বুঝতে পারল কি না, তাই আমরা কীভাবে বলব? এসব প্রশ্নের সমাধান এখানে প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক ৷ এভাবে “অর্থ, কথাটিকে যদি আমরা সহজ প্রচলিত অর্থে বিবেচনা করি , তা হলে দেখব যে, একটি শব্দের অর্থ সম্পর্কে কথা বলার মানেই হলো সেই শব্দটি কীভাবে ব্যবহৃত হলো সে সম্পর্কে কথা বলা । একজন ব্যক্তি সম্বন্ধে আমরা যখন বলি যে, তিনি । একটি শব্দের অর্থ শিখেছেন কিংবা বোঝেন , তখন আমরা এই বুঝি যে, শব্দটিকে কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, তা তিনি শিখেছেন বা বুঝেছেন । অর্থাৎ এ ভদ্রলোক একটি প্রতিষ্ঠিত সামাজিক প্রথার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছেন । অর্থকে একটি শব্দ ব্যবহারের ধরনের সঙ্গে এক করে দেখার বিষয়টি পরিষ্কার নয়। কিন্তু তা অপরিহার্য, কারণ বিভিন্ন শব্দ বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং তাতে বিভিন্ন ধরনের অর্থও নিহিত থাকে ।

* ট্রযাকটেটাস’ গ্রন্থে ভিটগেনস্টাইন বলেছিলেন, শব্দের মূল কাজ হচ্ছে কোনোকিছুকে চিত্রিত কিংবা বর্ণনা করা । ভাষা সত্তার চিত্রবিশেষ | জগৎকে নিয়ে ভাষার ক্রীড়া এবং ভাষায় ব্যবহৃত বচনের প্রতিটি অংশের সঙ্গে জগতের একটা সম্বন্ধ বিদ্যমান । এদিক থেকে বলা হয় , আমরা যাকে বাক্য বা বচন বলি, তা কিংবা জগতস্থ কোনোকিছুর চিত্র বা প্রতিকৃতি | সত্তা ও তার অংশের মধ্যে যে সংযোগ, তা-ই প্রতিবিশ্িত
হয় বচন ও বচনাংশের সংযোগে ।

এটি ভিটগেনস্টাইনের আদি মত কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি এ _ মতের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করেছেন । এখানে তিনি বলেন : শুধুমাত্র আক্ষরিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে উক্তি বা বচনের যথাযথ তাৎপর্য উপলব্ধি করা যায় না। এর জন্য বিচার বিশ্লেষণ অপরিহার্য বটে ; কিন্তু শুধু বিচার – বিশ্লেষণই ভাষার অর্থ নির্ণয়ের একমাত্র উপায় নয়। বিচার – বিশ্লেষণের পাশাপাশি যে বিশেষ প্রসঙ্গে ভাষার ব্যবহার সেই প্রসঙ্গের খ্যাও আবশ্যক ।

ভাষা বিশ্লেষণে “প্রসঙ্গ বলতে ভিটগেনস্টাইন কোনো-একটি বিচ্ছিন্ন বাহ্যিক প্রসঙ্গকে বোঝেন নি, বুঝেছেন এমন ঘটনাসমষ্টিকে যাদের কেন্দ্র করে ভাষার ব্যবহার | “কোনো ভাষায় ব্যবহৃত শব্দবিশেষের অর্থ বলতে আমরা যা বুঝি, তাহল উক্ত ভাষায় সেই শব্দের ব্যবহার ও উপযোগিতা”

এখানে উল্লেখ্য যে, ্রাটেটাস’ – এ ভিটগেনস্টাইন ভাষার যে একক কাঠামোর পরিকল্পনা করেছিলেন, এখন তিনি আর সেই একক কাঠামোর সমর্থন করছেন না। একক কাঠামোর স্থলে এখন তিনি বলছেন’ পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কাঠামো-পরিবারের কথা’ | এখানে তিনি বলেন : ভাষার উদ্দেশ্য শুধু বস্তু বা তথ্যের বর্ণনা নয়। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমরা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ভাষা ব্যবহার করে থাকি | আদেশ, অনুজ্ঞা , জিজ্ঞাসা , আবেগ – অনুভূতির প্রকাশ প্রভৃতি নানাবিধ প্রয়োজনে ভাষার ব্যবহার | ভাষা ব্যবহারের পেছনে যেমন রয়েছে একাধিক ইচ্ছা এবং উদ্দেশ্য, ঠিক তেমনি ভাষার কাঠামোও হবে একাধিক ।

এ- যুক্তিতেই ভিটগেনস্টাইন ভাষা – ব্যবহারের সঙ্গে তুলনা করেছেন ক্রীড়ানুষ্ঠানের৷ যেকোনো তরীড়ানুষ্ঠান যেমন কিছু নিয়ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তেমনি ভাষার ব্যবহারও কতিপয় নিয়ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এসব নিয়মের দিকে লক্ষ রেখেই আমরা ব্যবহার করি আমাদের ভাষা, বর্ণনা করি আমাদের আবেগ, অনুভূতি ও কার্যাবলি । এদিক থেকে ভাষাকে অভিহিত করা যায় মানুষের কার্যবর্ণনা বা জীবনপরিচালনার উপায় বলে।
বিবিধ কার্যানুঠানের মধ্যেই পরিচালিত হয় মানুষের জীবন এবং এসব কার্যানু্ঠানের রূপও বিচিত্র । বিচিত্র কার্থের ব্যাখ্যায় কোনো- একটি বিশেষ ধরনের ভাষা – ব্যবহারের দাবি তাই অযৌক্তিক ।